Thursday, March 5, 2015

মহাকালের দীর্ঘশ্বাস অথবা তারা ভরা রাতের কথা



বসন্তের সন্ধ্যেবালা। মাতাল হাওয়া। নির্জন রাস্তায়, শূন্য পকেটে হেঁটে আসার সময় হঠাৎ খেয়াল করবেন কমলা ফ্লুয়োরোসেন্ট আলোয় আপনার ছায়া আপনার সাথে হাঁটছে। নিজের সাথে নিজেই হাঁটা কি চমৎকার একটা বিষয়, ভাবা যায়? কি বিষ্ময়কর! তবে বড়দের বললে তেতে উঠে – “বড় হবি না কখনও?”

জীবনটাকে উল্টে-পাল্টে দেখতে গিয়ে এলোমেলো করে ফেলেছি। কিন্তু আস্তে আস্তে আবার ঠিক-ও হয়ে যাচ্ছি। অদ্ভুত এক হীলিং ক্ষমতা মানুষের। একটা শিশুবৎ বিষয় আছে। ভ্যান গগের সব কয়টা ছবি নিশ্চই এক বারে হয়ে যায় নি, রবীন্দ্রনাথ-ও নিশ্চই এক টানে সব লেখা লিখে ফেলেননি, হকিং সাহেব-ও নিজের থিওরি নিজেই ভুল প্রমাণ করে দাঁত বের করে হেসে ফেলেছেন।

কত সহস্র বছর ধরে তিলে তিলে আমরা সভ্যতা তৈরী করলাম, আবার নিজেরাই ধ্বংস করে ফেললাম, তার পর আবার তৈরী করলাম। কি অদ্ভূত এক মায়ার খেলা খেলে চলেছি! রাজা খুফুর পিরামিডের সব চেয়ে উপরের প্রস্তর-খন্ডটার জ্যামিতি বের না করতে পেরে আমাদেরই কেউ কত রাত চুল ছিঁড়েছে, নাম ভুলে যাওয়া কোন গ্রীক পূর্বপুরুষের কত রাত কেটে গেছে টিমটিমে রাতের তারা গুলির দিকে তাকিয়ে থেকে। আমারই কোন এক প্রপ্রপ্রপিতামহ মশালে আলো জ্বেলে বাইসনের জীবন্ত ছবি একেছিলেন আলতামিরায়, আবার কোন এক গন্ডগাঁয়ে গান বেধেছেন লালন ফকির। রাজস্থানে কেল্লার পাশে তারার আলোয় একতারের বাদ্য যন্ত্রে নিপুন ঘর্ষণ করুণ সুর তুলেছেন পাগড়ি মাথায় চেহারা ঢাকা রহস্যময় পুরুষ। মোঘল অন্দরমহলে ঘটে গেছে কত রাজনীতি, আবার মিসিসিপির কিনার ঘেঁষে ক্যানু বাওয়া রেড ইন্ডীয়ান এক দৃষ্টিতে দেখে গিয়েছে রাশে রাশে ঝরে পড়া ম্যাপল পাতা মাতাল হাওয়ার ঘূর্ণিতে অজানার দেশে মিলিয়ে যাচ্ছে।

সেই হাওয়ার সাথে এই বসন্তের সন্ধ্যেবেলা বয়ে যাওয়া হাওয়ার কোন পার্থক্য আছে কি? পার্থক্য আছে ক্যানু বাওয়া রেড ইন্ডিয়ান যুবা আর সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা বেকার যুবকের মনের মাঝে? যার সাথে কখনই দেখা হয় নি, সেই রাজস্থানী পুরুষের করুণ সুর হাজার মাইল দূরে বসা তরুণের মনে মধ্য রাত্রিতে কেন হানা দেয়? কিছুদিন গেলেই এ-দেওয়াল ও-দেওয়াল কেন রঙে ভরিয়ে দিতে মন চায়, সে কি আলতামিরার আঁকিয়ে পূর্বপুরুষদের প্রভাব? কত রহস্য ভেদ হয়ে গেছে, তার পরও তারা ভরা রাতে ছাদে শুয়ে আর ঘরে ফিরতে সায় পাওয়া যায় না?

পৃথিবী আর জীবনটা আমরা একটু জটিলই করে ফেলেছি। এত জটিল আসলে হয়তো নয়। অথবা জীবনের হয়তো নিজস্ব স্বত্বা আছে, চরিত্র আছে। প্রিয়জন আর আর চোর এর সামনে আমাদের যেমন ভিন্ন চেহারা ফুটে ওঠে, জীবনও নিশ্চই আমাদের সাথেও ব্যক্তিভেদে তা-ই করে।

অপার বিষ্ময়কর এক বিশালত্বে ভরা সবকিছু। আনন্দ-বেদনা-বিষন্নতা-ক্ষোভ-মোহ-প্রীতি সব অনুভূতি, সব কিছুই কি বিষ্ময়কর! আমি বলি, “কক্ষনও বড় হব না। ক্যালভিন এ্যান্ড হবস পড়ে, তারা গুণে, ছবি এঁকে, ছায়া দেখে জীবন কাটিয়ে দিবো। এত মধুর জীবন জটিল করে মরে যাবো না।” 

"...ওগো ফাগুন ছেলে, নতুন পাতার দিনে, ফিরে এসো এই গাঁয়ে দুঃখী দিন ফেলে..." - মহীনের ঘোড়াগুলি

1 comment:

  1. Nice one!!!! our life is just a little spot on the highway of time.... :)

    ReplyDelete