Friday, February 15, 2013

ঘোর...

কাঁধের কালো স্যাচেল ব্যাগটা সূর্যের তাপে তেতে আছে। সাত বছর হলো এই ব্যাগ ব্যাবহার করছি, এখন পর্যন্ত কোন ছেঁড়া-ফাটা নাই। কাঁধের একপাশ দিয়ে শরীরের অন্যপাশে ঝুলিয়ে রাখা এইসব ব্যাগ এর নাম যে স্যাচেল তা কয়েকদিন আগেও জানতাম না, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাকি এই ধরনের ব্যাগ ব্যাবহার করা হতো গুলি বহনের কাজে! শেক্সপিয়ার সাহেব এর “অল দ্য ওয়ার্ল্ড’স আ স্টেইজ” নামের নাটকেও নাকি ইংলিশ স্কুলবয় এর বিবরণে স্যাচেল বহনের কথা বলা আছে।

হাঁটতে হাঁটতে ধানমন্ডি লেইক এর সামনে চলে এসেছি। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। সূর্য একদম ঠিক মাথার উপর। সেই শ্যামলী থেকে হাঁটছি। চিন্তা ভাবনা গুলিয়ে যাচ্ছে। এই লাটসাহেবের শরীর এত অল্পেতেই ক্লান্ত হয়ে যায়, কী করা যায় তাই ভেবে পাই না। ঠিক মত খাওয়া-ঘুম হলে তবে সাহেবের শান্তি, নয়ত যখন তখন বেঁকে বসবে। তাঁর উপর সকাল বেলা চা’র দোকানে সেই টাকমাথা লোক এর সাথে বাকবিতন্ডা করে মেজাজটা আরো খিঁচড়ে আছে, হাতের ধাক্কায় গত মাসে বানানো প্যান্টটাতে চা ছলকে ফেলে উল্টো আমাকেই ধমকায়। উচ্ছন্নে গেলো দেশটা, কিসসু হবে না এখানকার।

আমি চলেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষকের সাথে দেখা করার কথা। এই রে! মেঘ করল। বৃষ্টি এসে গেলেই তো কম্ম-সাবাড়। পা চালিয়ে হাঁটতে হবে। স্যার দুপুরে আমাকে নিয়েই ভাত খাবে বলেছে। ২টার আগেই পৌঁছাতে হবে। ওই তো নীলক্ষেত মোড় দেখা যাচ্ছে, গ্রীস্মের দুপুরে মরিচীকা’র মত ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে ওদিকে। মঙ্গলবার দিন নিউমার্কেট বন্ধ, রাস্তা তাই অনেকটাই খালি। দল বেঁধে ইউনিভার্সিটি’র মেয়েরা যাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি নাকি ইডেন কলেজ? আচ্ছা, ইডেন মানে স্বর্গোদ্যান না? মেয়েদের কলেজ এর নাম দিয়েছে স্বর্গোদ্যান, অদ্ভুত লাগলো তো!

এইযে নীলক্ষেত এসে গেছি। এখানে কি নীলকর সাহেবদের ক্ষেত ছিলো? কী ব্যাপার? নীলকর সাহেবকে নিয়ে ভাবছিলাম, তিনি গেলেন কই? সব সাদা হয়ে গেলো কেন? কোন শব্দ নাই কেন?

এইতো শব্দ কানে আসছে, অনেক দূর থেকে কারা কথা বলছে, কিন্তু কী বলছে তা বুঝতে পারছি না। আবার চলে গেল শব্দ।

ঠান্ডা লাগছে। সামনে কতগুলো মানুষের মুখ। আমার কাছে কী? একি, পানি কেন? বৃষ্টি নেমে গেছে! আমাকে চোখ খুলতে দেখে একজন বলল, “চোখ খুলসে”। উঠে বসলাম, দূর্বল লাগছে ভীষন। কথা শুনে বুঝলাম একটা গাড়ি’র ধাক্কায় ছিটকে পড়েছিলাম। কিন্তু আমার ব্যাগ কই? ভীড় হালকা হতে শুরু করেছে, আমি নীলক্ষেত এর আইল্যাণ্ডে বসে আছি। ঝুম বৃষ্টি। মাঝে মাঝে বাতাসের কারনে বৃষ্টি’র ধারা এ্লোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ব্যাগে আমার শ’দুয়েক টাকা র এসএসসি’র অমুল্য সার্টিফিকেট আর নম্বরপত্রের কথা মনে পড়ে গেলো। রসায়ন এর স্যার এর কাছেও আর যাবো না। ড্রাইভার এর চাকরিটা হাতছাড়া হয়ে গেলো।

বৃষ্টি কমে এসেছে। বাতাস কমেনি। কনুই এর কাছে কই জানি জ্বলছে খুব। থুতু দিতে হবে। থুতু নাকি এন্টিসেপ্টিক।ঠান্ডা মাতাল হাওয়ায় পানি’র ছাঁটে ঘোর লাগা ভাব হচ্ছে। শ্যামলী কত দূর আর?