Friday, September 14, 2012

glimpse of life... এক দিন...


ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে। ভীষন বিরক্ত লাগছে। পুরা ভিজিয়েও দেয় না, আবার শুকনাও থাকতে দেয় না। এর নামই কি ইলশে গুঁড়ি? মানুষ কেন এর এতো সুনাম করে কে জানে? যারা করে, তারা মনে হয় এক ঘন্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করেনি।

কাঁধে ভারী ব্যাগ, কাঁধ কেটে বসে যাচ্ছে। আবহাওয়া শীতল লাগার কথা, শীতল লাগছে না। দর দর করে ঘামছি। ঘাম আর বৃষ্টির পানি চশমায় এসে জমছে। যখন আর জমতে পারছে না, তখন গাল বেয়ে পড়ছে। 

চার পাশে কী হচ্ছে খেয়াল করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কোন একটা জায়গায় দৃষ্টি স্থির রাখতে পারছি না। সব কেমন বিকট ঝাপসা লাগছে। কারণটা আবিষ্কার করার চেষ্টা করছি, মাথায়ও জট লেগে গেছে। তার মধ্যেই দেখলাম ডান পাশে দাঁড়ানো ছেলেটাকে। আজকাল এক রকম ব্যাগ উঠেছে, ত্রিভূজ আকৃতি, দু’প্রস্থ দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে, ত্রিভূজের উপরের দিকাটায় সহস্র ভাঁজ, ব্যাগের গায়ে চে বা লেননের ছবি প্রিন্ট করা, তেমনই একটা ব্যাগ কাঁধে। চুল বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। স্থির হয়ে দাঁড়াতেই পারছে না। শেষে একটা খবরের কাগজ কিনে নিয়ে এলো, পড়ার চেষ্টা করলো, কিন্তু অস্থির। হঠাৎ দেখি বসে পড়লো, দু’টো খুটি’র মাঝে দড়ি বাঁধা, সেই দড়িতেই।

ছেলে আর মেয়েরা কেনো যেন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে না। মেয়েরা একটু তফাতে দাঁড়ায়, ওদের থেকে কথা বার্তার কলরব ও বেশ শোনা যায়। কখনো কখনো মেয়েদের জটলাটার ভিতর দু’একজন ছেলে’র সহাস্য উপস্থিতিও দেখা যায়। কিন্তু ছেলেদের দলটাতে এগুলি একেবারেই দেখা যায়না। কেনো যায় না? যাকগে।

ক্ষিদেয় মোচড় দিয়ে উঠছে পেট। আগের দিন সন্ধ্যায় ছাত্রের বাসায় এক পিরিচ ছোলা খেতে দিয়েছিলো। এর পর তো আর কিছু খাওয়া হয় নি। ভেবেছিলাম সাতটার বাস ধরতে পারলে আগে গিয়ে কিছু পেটে যাবে। এখন তো উপায় নাই। সোয়া আটটা বাজে। ডান পাশের ছেলেটা হঠাৎ বললো বাস আসবে না। বৃষ্টি ততক্ষনে খানিকটা ধরে এসেছে। আমাদের মতো ছেলেদের জন্য এই বাস না আসার সংবাদ মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার থেকেও খানিকটা বেশি। এখন একটা তেরো নম্বর বাস ধরে উঠে পড়া দরকার। ফুটপাত থেকে পা বাড়াতেই একটা সাদা গাড়ি সাঁৎ করে এসে থামলো, খেয়াল করতে গেলাম প্যান্টে কাদা ছিটলো নাকি? দেখি গাড়ির পেছনের দরজার কালো কাচ নেমে গেলো, ভেতর থেকে কাটা কাটা চেহারার এক মেয়ে কানে গুঁজে রাখা ইয়ারফোন খুলতে খুলতে বললো, “আপনি এতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন কেন? দেখলে মনে হয় কোন মুভমেন্ট নাই! উঠে আসেন।”

আমি তো তাজ্জব, ড্রাইভারকে ক’টা কড়া কথা শোনাবো ভাবছিলাম, এখন সেই গাড়িতেই উঠার আহ্বান। মিশ্র অনুভূতি চলার সময় সিদ্ধান্ত নিতে পারি না একেবারেই। অনুভুতি’র বেপারটা কি আসলে পুরাটাই রাসায়নিক? কে জানে। আমার সাথেই অপেক্ষারত ছেলেটা দেখি আগ্রহভরে তাকিলে আছে। কিন্তু চুপ করে থাকলে তো চলবে না। কিছু একটা উত্তর দিতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন?” মেয়েটা ঠা ঠা করে হেসে বললো, “আপনি করে বলছেন কেন? আমি ইকোতে, সেকেন্ড ইয়ারে, আপনি উঠছেন না কেনো? বান্ধবী আছে? উঠলে কি রাগ করবে? বাস আসবেনা জেনে আমি গাড়ি পাঠাতে বললাম, আর আপনি দাঁড়িয়েই আছেন?” 

কনিষ্ঠ। দু’বছরের। জানে কীভাবে যে আমি তার বড়? ঘোরের মধ্যেই উত্তর দিলাম, “আপনার দেরি হচ্ছে, আমি পাবলিক বাসেই যাবো।” পেছনে কান ফাটানো হর্নের শব্দ, কয়েকটা কটু কথাও বুঝি শোনা গেলো। কালো কাচ খুব ধীরে উঠে গেলো। স্বয়ংক্রীয় মনে হয়।

আমার এই এক সমস্যা- যখন তখন দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, তার পর নিজের ভিতর ঢুকে হারিয়ে যাই – যেভাবে কালো কাচের আড়ালে মেয়েটাকেও আর দেখা গেলো না। অন্ধভাবেই একটা তেরো নম্বরের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে পড়লাম। গায়ে কাদাও মনে হয় ছিটলো খানিকটা। রাগ হলো না। কার উপর রাগ করবো? আবার বৃষ্টি নেমেছে। পরের ক্লাসটা যেন কার? এহহে, মেয়েটাকে যে ধন্যবাদও দেওয়া হল না?