Sunday, June 12, 2016

দালি'র হাতিরা এবং সেদিনকের ঘটনাটা...

হয়েছে কি, কী একটা যেন পড়তে গিয়েছিলাম। পড়া শেষ করে বেরিয়ে অপূর্ব ফোন দিলো। জরুরী তলব। বাসায় না গিয়েই ওর বাসার আশেপাশে দেখা করলাম। ও গলা নামিয়ে বললো 'এই এই' হলো ঘটনা। আমিও আর কাল বিলম্ব না করে রাস্তায় সবার সামনেই (এবং সবার অলক্ষ্যে) চোখের নিমেষে খাকি ইউনিফর্ম বুট-টুট পরে নিলাম, অপূর্ব-ও। আমাদের দু"জনেরই পুরনো কিন্তু অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রীয় (থ্রি-নট-থ্রি'র মত দেখতে) হাতিয়ার। কাঁধে বই খাতার ভারী ব্যাগ এবং ইউনিফর্ম-বুট-হাতিয়ার নিয়ে আমরা দু'জন দু'দিকে ছড়িয়ে গেলাম। এর মধ্যে অবশ্য আরেকবার দেখা হয়েছিলো, কাকে যেন তাড়া করতে গিয়ে আমরা একটা গলিতে ঢুকে গেলাম, তারপর একটা অন্ধকার বাড়ির খিড়কি দিয়ে উঠে কাকে যেন অস্ত্র-শস্ত্র দেখিয়ে আর চিৎকার করে ভয় দেখিয়ে আসলাম।

বেশিক্ষণ সময় লাগলো না, রুবিক'স কিউবটা আমিই খুজে পেলাম। হঠাত দেখি রিক্সা চেপে অপূর্ব আসছে, রিক্সার ধাক্কায় পড়ে গেলাম। গিয়েই আমার (জীবনে প্রথমবারের মত) আমার অস্ত্রটা লোড করে ওর দিকে তাক করে ঘোড়া টিপে দিলাম, অনেক বার। গুলিগুলো ওর মুখের মধ্যে ঢুকে গেলো আর ও তেমন ভীতি কর কিছু করতে পারলো না। ওকে ফেলে হাউজিং-এর দিকে রওনা হলাম। হওয়ার পথে মনে হলো হায় হায় ওর কাছে তো অস্ত্র বা ইউনিফর্ম কিছুই ছিলো না, মারলাম কেন? যেই মনে হওয়া অমনি ফোন দিলাম, 'দোস্ত কই তুই, গেটের সামনে আয়।' চলে এলো। ওর বাসায় উঠলাম, উঠে অপরাধবোধে আমি তেমন কিছু বলছি না, ও-ও নরমাল। হঠাত দেখি আমাদের দুর্ধর্ষ ঘটনাটা নিউজ হয়ে গিয়েছে অনলাইনে। আমরা একই সাথে চিন্তিত এবং আনন্দিত হয়ে পড়লাম। হঠাত কি হলো আমি ওকে জড়ায়ে ধরে 'ভাই আমার, তোকে আমি কিভাবে শ্যুট করতে পারলাম, বেশি ব্যথা পাসনি তো?' বলে কেঁদে ফেললাম।

এই করতে করতে দেখি রাত হয়ে গেছে। এক রাশ সাফল্য, চাপা আনন্দ, ভীতি নিয়ে আমরা রাস্তায় নামলাম। ওকে বললাম, নিউজগুলা দেখতে তো মজাই লাগছে, থেকে যাবো নাকি তোর বাসায় রাতে? ও বললো আমাকে রিক্সে করে বাড়ি দিয়ে আসবে। রিক্সা খোঁজার জন্য নির্জন রাস্তায় হাঁটছি, হঠাত একটা রিক্সা-ও এলো, সাথে দু'পাশ দিয়ে দু'জন লোকও এলো। অপূর্ব বললো ও উঠছে, কিন্তু আমার ডান পাশে উঠে বসলো চেক শার্ট পরা গাট্টা-গোট্টা লোকটা, খানিকটা ভয়ই পেলাম। তারপর একটা মোড় আসতেই বললাম 'আপনি যাবেন কই?' লোকটা বললো 'ক্রিসেন্ট লেক'। এই মাঝরাত্তিরে ক্রিসেন্ট লেক (যদিও আমার বাসার কাছেই)! একটা মোড় আসতেই বললাম 'আচ্ছা তবে, আমি ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি, এখানেই নামবো, আপনি চলে যান, স্লামালিকুম।' মানিব্যাগ বের করে দেখি অসংখ্য পাঁচ টাকার নোট, গুণে দিতে সময় লাগলো।

এখন কী করি? কোথায় নামলাম চিনতেও পারছি না। রিক্সেও পাচ্ছি না। খালি বসে আছে, কিন্তু আমি জানি যাবে না, কই যেন লেখা আছে। দাঁড়িয়ে আছি, অনেক রাত হয়েছে, কিন্তু একটু একটু সূর্য উঠছে। এক লোক একটা চপার টাইপের মোটরসাইকেল চালিয়ে এসে আমার সামনেই রাখলো, রেখে কই যেন হাওয়া হয়ে গেলো। অগত্যা আর কি করা, পকেট থেকে চাবি বের করে, ভারী ব্যাগ-ট্যাগ নিয়ে (জীবনে প্রথমবার) বাইক চালিয়ে বাসায় চলে এলাম। শুধু চলেই যে এলাম তা নয়, লিফটে একেবারে ৬ তলার সিঁড়িঘরে তুলে ফেললাম, এখন মনে হলো, ফেরত দিবো কীভাবে? তারপর সিড়িঘরে (যদিও বাতি জ্বলছিলো না) সুইচ নিবিয়ে বাসায় ঢুকলাম, পিপ-হোল দিয়ে দেখি বাইকের উপর কে যেন একটা হলদেটে তোয়ালে মেলে রেখে গেছে। বাঙ্গালী!

ঘরে এসে ঘুমুবো, হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেলো।